ঢাকা, বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২, ২৮ ভাদ্র ১৪১৯,১৯তম সংখ্যা

আজ প্রকাশিত হলো ১৯ তম সংখ্যা,আছে মোট  ২০ টি কবিতা,
লিখেছেন-ডা.সুরাইয়া হেলেন,সরদারফারুক
মৌ দাশগুপ্তা,শামীম পারভেজ, এম আর ফারজানা , রাওয়ান সায়েমা,অরুণিমা,অলক বিশ্বাস,রুদ্রশংকর,জিনাত জাহান খান,ইন্দ্রাণী সরকার,পর্ণা,অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়,তাবেয়া ইসলাম, কুতুব আফতাব,নাফিয়া সুলতানা (নিলি),মুস্তফা কামরুল আখতার,যাযাবর জীবন,আব্দুল্লাহ জামিল এবং মোঃ আলী হাছান শামীম
 

সেই শরতেএই শরতে

ডা.সুরাইয়া হেলেন

এই তো গত শরতে
তুমি ছিলে মেঘের
পরতে পরতে !
ছিলে পেঁজা-তুলো
মেঘ কাশফুলে
এসেছিলে ভালোবাসায়
জীবন রাঙাতে !
ছিলাম তোমার
হৃদয় পর্বতে
এই তো সেদিন
গত শরতে !
খুশি আনন্দে সাজিয়ে
সুবাসিত করেছিলে
প্রতি মুহূর্তে !

আজ এই শরতে
আমায় ছেড়ে চলে গেছো
পৃথিবীর কোন সুদূর প্রান্তে?
তোমার এতো ভালো লাগে
আমাকে কাঁদাতে ?
আমায় ছেড়ে
দূরে দূরে থাকতে?
আমার কাছ থেকে
হারিয়ে যেতে ?
আমায় ফাঁকি দিয়ে
লুকিয়ে থাকতে ?
আম তো পারি না
তোমায় ভুলতে !
খুঁজে ফিরি
সুনীল আকাশে
জলহীন মেঘের
পরতে পরতে !
কাশফুল পেঁজা-তুলো
মেঘের ভেলাতে
এই শুভ্র সুন্দর ঝকমকে
নীল রঙা শরতে !

ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান

সত্যের মুখ
হিরণ্ময়েন পাত্রেণ সত্যষ্যাপিহিতং মুখম্
(
সত্যের মুখ উজ্জ্বল সোনার পাত্রের দ্বারা আবৃত-ঈশ উপনিষদ )

সরদার ফারুক

সাপের খোলস হয়ে খসে পড়ে পিউটার স্কিন
চরৈবেতিবলতেই অন্ধকার পাখা সাপটায়
হায় কান্তিবিদ্যা , হায় অদেখা শিখর
আত্মহননের গুপ্ত প্ররোচনা শাপগ্রস্হ প্রাচীন নগরী !

ধাতুবিদ্যা এখনো জানিনা
কি করে পৃথক করি আকরিক থেকে
অপদ্রব্য , অমূল্য খনিজ ?

শিরোপায় কাজ নেই লাঞ্ছনা দিওনা
বোধিবৃক্ষতলে বসে তিতিক্ষু শ্রমণ

ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান 

সংশয় বিষ

মৌ দাশগুপ্তা

মনের চাইতে বড় কোনো আকাশ নেই,
ভাবনার চাইতে কালো কোনো মেঘ নেই,
অবাধ্য মনকে শান্ত করতেই আজ দুহাতে আর্দ্রতা কুড়চ্ছি,
যাতে রাত ভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়ে মনখারাপের মেঘটা উড়ে যায়
আসলে, জীবনের সাথে রতিসুখের ক্লান্তিতে বিধ্বস্ত মন ঢাকা পড়েছে
বাস্তব নাম্নী মেঘবতীর অবিন্যস্ত কৃষ্ণকালো কেশে,
সে কৃষ্ণ-কেশ আবরণ ছুঁড়ে আবার সে মনপবন হয়ে বয়েছে এদিক ওদিক,দিশাহীন
কখনও দেখছি মনের ঝোড়ো বাতাস দিক পাল্টে বয়ে গিয়েছে
হৃদয়ের সড়কপথে,হিলহিলে সাপের মতো শরীর বাঁকিয়ে ;
তারপর বদলেছে খোলস, টুকরো অংশ ঝুলে আছে সংশয়ের ঊর্ননাভ জালে
বাকিটা এলোমেলো ঝড় হয়ে পথেই হারিয়েছে ঠিকানা,
আর, রুদ্ধ আবেগে নিরুদ্দেশ বাতাসের ঘূর্ণিতে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে ,
দিনরাত ছায়ার মত লেপটে থাকা নিরাকার অশরীরী মানুষ হয়ে
কেড়ে নিয়েছে সর্বস্ব! জীবনের শান্তি,হৃদয়ের সুখ,প্রাণের আরাম
ঝড় থামতেই আমি পথ থেকে কুড়িয়ে নিয়েছি টুকরো সুখ ,
মুঠোয় ভরেছি লুটানো খুশীর চকচকে নুড়ি পাথর,
আঁচল ভরে জড়ো করেছি ডানাভাঙা স্বপ্ন,দোমড়ানো কল্পনার অবশেষ,
অনিচ্ছাকৃত প্রাপ্তির সুখ,গদ্যময় অবহেলা,অসমাপ্ত ভালোবাসার রূপকথা
স্মৃতিরূপী বিবর্ণ সময়ের আঠা দিয়ে কুড়ানো সম্পদের বানিয়েছি
সাদাকালো কোলাজ, কান্নাহাসির জলছবি, খালি মন আমার দেখবে বলে ,
আশার প্রদীপ জ্বেলে চোখের আলোয়,চিনে ফেলেছি কাব্যবিহীন এই জীবন,
প্রচলিত কাব্যের নিয়ম ভেঙ্গে শব্দের ডালপালা দিয়ে সাজিয়েছি
নার্সিসাসের মত আত্মপ্রেমের পদাবলী!
তবু জখম মনে আত্মতৃপ্তিতে অকারণেই ছন্দ পতন ঘটে!
মনের ভিতরে না পাওয়া অতৃপ্তির দংশন ছড়ায় ভালোবাসার নীল বিষ

ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান 

যার হবেনা ক্ষয় , থাকবে অমর হয়ে

শামীম পারভেজ

আমার হৃদয়টাকে ছিনিয়ে নেয়ার সাহস কারো নেই,
এটা স্থায়ি ভাবে লাগানো সেথায়
তবে এখানে বসোবাস করার অনুমতি আছে,
এখানে আছে মায়া মমতা , স্নেহ আদরে আবৃত
ভালবাসা নামের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হাওয়া
আছে ব্যাথিত মন স্বুস্থ্য করার সুর লয় তাল গানের নিরাময় কেন্দ্র ,
আছে ছন্দের বিশাল ভান্ডার ক্ষধা নিবারনের জন্য ,
আছে ভালবাসার স্পর্শে সুখি জীবন তৈরি করার কারখানা
না না না , কোনো ভাড়া দিতে হবেনা ,
আর ভাড়া কেহ দিতেও পারবেনা
আমি শেষ হয়ে যাবো , পঁচে যাবে সব,
কিন্তু হৃদয়ের বাসিন্দারা তরতাজা করে রাখবে
আমার হৃদয়টাকে ,
যার হবেনা ক্ষয় , থাকবে অমর হয়ে
ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান  

কিছু চাওয়া

 এম আর ফারজানা

ধরণীর
পথের ধুলায়,কে রবে কোথায় পরে হায়
জানো কি মহৎ কর্ম, মানব সেবাই ধর্ম
অন্ধকারে জীবন যাদের করো না ঘৃণা তাদের
ক্ষণিক সময় যদি পারো মায়ার বাঁধনে ডোরো
নয় রণসাজ করো সততার কাজ হও সভ্য
দাও স্নেহের দান খুলে মনপ্রাণ যার যেটুকু প্রাপ্য
যা কিছু তোমার আজ ভোগ বিলাসে পাবে লাজ
ফেলো মোহের সাজ,বেচে রবে তোমার যত কাজ
তোমার দান ইতিহাসে রবে পরে, তুমিই যাবে সরে
নিয়ে মৃত্যুর স্বাদ সারেতিন হাত মাটির ঘরে

ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান  
"কাট্-কাব্য
রাওয়ান সায়েমা

ভয়েস ওভারে নৈঃশব্দ থাকবে ,
ওকে !
রেডি !
রোলিং . .
একশন !

মির্চা ,
সেদিন নৌকোতে ডুবে মরতে পারলে বোধহয় জীবনের
গভীরতম প্রাপ্তি পেতাম. . .
কাট্ !
পুতুপুতুবাদ বাদ !
এগেইন গাইজ্ ,
জোন কোয়াইট !

রোলিং . . .
একশন !

মির্চা ,
একবার ডেকে দেখ ,
তোমার দেহপল্লবে এক আকাশ
বাতাসে বক্ষবন্ধনী উড়িয়ে বিলীন হবো
নষ্টামির সহ্যসীমা ছাড়িয়ে নষ্টমন্দিরের
উপাসিনী হবো . .
কাট্ ! কাট্ !
অশ্লীলতা !

কাট্ !

গাইজ্ বি রিয়ালিষ্টিক !
কোয়াইট , রোলিং . .

একশন !

মুরুব্বিরা , ধর্মপালের সেতুর ওপারের বাসিন্দাদের
পিষ্ট করা হয়েছে ,
আমরা ,

হ্যাঁ এই আমরাই,তাদের
না-পাওয়াদের দলিত
দলে অন্তর্ভুক্ত করেছি
তাদের মেয়েদের অভুক্ত করে করে হিংস্র করেছি
পুরুষদেরকে করেছি রক্ত-মাংসের দাস
আর ক্ষমতাতান্ত্রিক ইঁদুরগুলোকে বাঘ
বানিয়ে ধর্মের কল বসিয়েছি. . .

কাট্ ! কাট্ ! কাট্ !

হচ্ছে না , হবে না !
সেন্সরহীন !

ট্রাই এগেইন ,
ওকে রোলিং . .

একশন !

প্রশস্ত সড়কের ছুটন্ত যান গুলো গতির
মাঝে গতিশীল কিন্তু সেই গতিতেও স্থির এক
পূর্ণেন্দু চন্দ্রাহত বালিকা বধূর মৃত্যুলগ্ন ,
আকাশটাও আজ রক্তিম সিঁথি ভরা সিঁদুর এর মত
মেঘ আজ কাজলকালো যেন অপেক্ষা করছে কোন এক
বিষণ্ণ থেঁতলে যাওয়া নরম শরীর এর জন্য আর
আমিও প্রতীক্ষা করছি সবুজ প্রকৃতির গাঢ় হলুদ
রুপের জন্য....

আজ আর পবনকেও মানবোনা !

কাট্ ! কাট্ !

নো নিহিলিজম !
আহ্ ইউ অল গাইজ্ আর হলি শীট্ !

প্যাক . . . !
 
ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান  

ধরণীর অনন্ত অম্বরে

অরুণিমা

তোমাকে তীর্থ ভেবে
তীর্থযাত্রা শুরু করেছিলাম,
ভুল বুঝে চলে গেছ তুমি
পেছনে ফেলে অশ্রুত সময়--
তোমার রোমশ বুকে মাথা ঠেকাবার
সুখ বোধ হয় আমার কপালে লেখা নেই,
তাহলে কি করে যে হব আমি
প্রণয় রাধিকা ?
এরচেয়ে প্রিয়তম একপেয়ালা হেমলক এনে দাও
সূর্যদেবকে শেষবারের মত নমস্কার জানিয়ে
চলে যাব ধরণীর অনন্ত অম্বরে
 
 ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান 
 
বালিহাঁস

অলক বিশ্বাস

প্রবাসী হাওয়ায় যে ভাবে মেতেছো মেঘ,
থেকো আপ্লুত প্রখরতা ছুঁয়ে গেলে জল
বিপরীত বাতাসের ডাকে দিও সাড়া
নির্ভুল বৃষ্টি নেমে এসো

প্রসন্ন যে গানে ছুঁয়েছি ভোরবেলা,
কষ্টের দিনগুলি দিয়েছে নির্বাণ
পাতায় পাতায় বিরহ সুরে সুনন্দবেলা

কৌটো ভরে তুলে রাখা ছায়া ঘ্রাণ
নদীর কল্লোলে তুমিও থেকো

আমাদের চারপাশে অজস্র উত্তাপে পুড়ে যাওয়া
মুগ্ধতা আমাদের, দুচোখের কান্নায়
ওড়াবো বৃষ্টিতেএসো

এই বৈশাখে ইচ্ছেরা জেগেছে আলোয়
আসতেই হবে সর্বনাশ, সমর্পিত ক্ষত
মন খারাপের দিনে চোখে চোখে আগুন জ্বেলেছি যত

বালিহাঁস তুই বৃষ্টি নিয়ে আয়

 ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান

মেটামরফোসিস 
রুদ্রশংকর
পৃথিবীকে আরো বেশী গোল করেছে
প্রজাপতির মেটামরফোসিস
টোকিও থেকে আটলান্টা
আটলান্টা থেকে টোকিও
হাত ধরাধরির পর পাঁচ আঙুলে
চেরি-ব্লোসামের রাগ ঢুকিয়ে দেয় সায়াকা
মাঝের দু’বছর ফুজিয়ামার উষ্ণতায়
প্রতিমাসে একটি পূর্ণচাঁদ ই-মেল আসত
তার উত্তরে আমিও গুটি কেটে -
উড়িয়ে দিতাম নৈঃশব্দ্যের ই-মেল
নিস্তব্ধতা মাঝে মাঝে এলে ভাল লাগে ৷

 ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান

চোখের পাশে চোখ
জিনাত জাহান খান

তোমার একাকীত্ব থাকবে না
আর মনে
সোনালী দুপুর , রূপালী বিকেল
ভবের হাঁটে কেনা - বেচা ,
নিবিড় পৃথিবীর রাঙা জীবনের দেনা
থাকবে না যখন কিছুই মনে !
কিছু কি থাকবে কোথাও ?
উধাও এই আলো - ছায়ায়
বিকেলের উপকূলে বিকেলের শ্বাস ফেলে
চুপচাপ অপলক ডুব চোখে
তখন হয়তো কিছু থাকবে কোথাও
ছবি তোমার আমার ভালোবাসার গামে
লেপ্টে আছে হৃদয় দেয়ালে -
আর তুমি পারো না একা
হৃদয়ে তাকাতে
যতবার তাকাবে দেখবে আছে পলকহীন চোখ
তোমার চোখের পাশে
হয়তো আমার

 ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান

রাখালের বাঁশি

ইন্দ্রাণী সরকার

অনেক চাঁদ তারাদের ভিড়ে
তুমি হারিয়ে গিয়েছিলে ....
আজ দুপুরে এক পশলা
বৃষ্টির মাঝে তোমায় খুঁজে পেলাম....
রাখাল ছেলে সেজে তুমি
গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে
বাঁশি বাজাচ্ছিলে একা একা ....
শুকনো মুখ, আধবোজা
চোখের পাতা, সুরের
মূর্ছনায় ভাবালু মন |
আমি তোমার পাশে
এসে দাঁড়ালাম .....
প্রথমে তুমি আমার
অস্তিত্ব অনুভব কর নি...
হঠাত আমার চুড়ির আওয়াজে
তুমি সম্বিত ফিরে পেলে....
বললে ..."নতুন বন্ধু আমায়"
"
কী একটু জল দেবে ?"
"
বাঁশি বাজাতে বাজাতে"
"
আমার গলা শুকনো কাঠ" ....
আমার সঙ্গে যে জলের
জায়গাটি ছিল তার থেকে
তোমার হাতে জল ঢেলে দিলাম -----
জল পেয়ে তোমার চোখ
খুশিতে নেচে উঠল |
ভেজা ঠোঁট মুছে তুমি
ফের বাঁশি বাজাতে শুরু করলে ....
আমি ধীরে ধীরে আমার
পথ ধরে চলে গেলাম ....
ফিরে দেখলাম তুমি এখন
সেই গাছের তলায় তোমার
বাঁশিটি নিয়ে দাঁড়িয়ে ....
কিন্তু আর বাজাচ্ছ না
মুখ আনত ভাবাকুল ||

 ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান
প্রিয়তমার প্রতি
 পর্ণা

সেদিন অভিমানে বলে গেলে-
কাল আর আসব না তোমার কাছে
পরের দিনও আসবে কিনা জানিনা
একরাশ হতাশা আর রক্তাক্ত হৃদয় নিয়ে
অনন্তকালীন অপেক্ষা শুধু তোমার জন্যই !

প্রতিদিন সকালে ইনবক্সে মেসেজ রেখে যাও
আজ পাইনি তোমার সুপ্রভাত ভালোবাসা
পাইনি জড়িয়ে ধরার সেই চেনা গন্ধ
কিংবা ঠোঁটের সেই উষ্ণ মাতাল চুম্বন
কিছু না পাওয়ার কষ্টে অতিষ্ঠ জীবন !

আবার ফিরে আসবে সেই বিষণ্ণ দুপুর
একা গিয়ে বসে থাকা প্রিয় শিরীষ
হতাশ চোখে চেয়ে দেখা ক্ষীণস্রোতার বয়ে চলা
কুড়িয়ে আনি ঝরে যাওয়া সব পাতা
বিছিয়ে শুয়ে দেখি আসন্ন সন্ধ্যার আগমন
পূর্ণিমার চাঁদের কাছে নালিশ জানাব আজ
ফিরিয়ে দাও আমার প্রিয়তমার প্রিয় আঁচল !!!

 ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান
 
 
একলা
 
অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

ইচ্ছে করে নীল বসন্তে হারিয়ে যাওয়া
ধুলোর স্পর্শ মাখব গায়ে এই শরতে মাতাল হয়ে
ভরিয়ে নেব এইটুকু প্রাণ...
নিঃসঙ্গ দুপুর বেলায়... যখন খেলি আপন মনে
উলটো দিকে আমার মনই দোসর হয়ে দ্বিগুণ টানে
বলতে পারো কোনখানে যায় ঘুড়ির সুতো একলা হলে?
শূন্যে ভাসে বিকেলবেলা দোদুল দোলে মনের কোলে
অন্য সে মন একলা হয়েও অনেক থাকার গল্প বলে
আমার জন্য ভাসবে জেনেও একলা-মানুষ বাতাস গোনে
একদিন তুই একলা আসিস, আমার কাছে বিকেল বেলায়
হারিয়ে যাওয়ার গান শোনাবো সেদিন তোকে অকাল-সময়
ভয় পেলি মন? একলা হতে ? একলা ছাড়া কে আর আছে
একলা মানুষ একলা বসে, একলা শুধুই একলা বাঁচে
আমিও তাই গান গেয়েছি... মনের সঙ্গে একলা যাব
হারিয়ে যদি যাই তো যাব, সঙ্গহীনের সঙ্গ নেব

 ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান 
 
 ভালবাসার অপেক্ষা

তাবেয়া ইসলাম 

ইট পাথরের দালানের ভিড়ে
হারিয়ে গিয়েছে আমার ভালবাসা ,
ভালবাসা তুমি কি বলতে পারবে
কোথাই এখন তোমার বসবাস ?
...
গ্রামের সেই মধু মাখা
দিনগুলোর কথা মনে পরে বারংবার ,
যেখানে ছিল মাটির গন্ধের সাথে
মিশে থাকা আমাদের ভালবাসার গন্ধ ,
গাছের ছায়ার নিচে তোমার বুকে
মাথা রেখে হারিয়ে যেতাম দূর দূরান্তর ।।

বলতে পারো ভালবাসা এখন কোথাই তোমার বসবাস ?

তোমার কথা ভেবে ভেবে
আমার তন্দ্রা যাই তোমাকে খুজতে ,
যেখানে তুমি আমি গড়ে রেখেছিলাম
আমাদের ভালবাসার স্বর্গ রাজ্য ।।

ভালবাসা কখনো কি পাবো দেখা তোমাকে ?

যে ভালবাসার জোসনা মাখানো চাঁদনী রাতকে
সঙ্গী করে আমাদের দুই আত্মার মিলনের চুম্বনে চুম্বনে
তৈরী করেছিলাম ভালবাসার মানচিত্র ।।

ভালবাসা আবার কি পাবো দেখা তোমাকে ?

 ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান

০১৭১******* 
কুতুব আফতাব

এক ফোটা বৃষ্টি ছুঁলেই চঞ্চল হয়ে উঠি
আমার বৃষ্টি বিলাসী মন তোমাকে নিয়ে ভিজতে চায় শ্রাবণ বরিষণে
সেলফোনের বোতামগুলো চকচক করে উঠে,
নাম্বারটা মুখস্থ এখনো ০১৭১****** !
জানি বাজবে ওপাশে,
বলবে না হ্যালো
তবু ডায়েল করি বারবার
সুকন্ঠি মেশিনকন্যা ললিতসুরে বলে-
"
আপনার ডায়েলকৃত নাম্বারটি এই মুহূর্তে বন্ধ আছে ,অনুগ্রহ করে পরে ফোন করুন"
অর্ধযূগ চলে গেলো মেশিনকন্যা একই কথা বলে যায়,
অনুগ্রহ করে নয় উন্মাদের মতো আমি তোমাকে কল করে যাই,
তুমি বন্ধ ফোন আর খোলো না

বসন্ত এলে বনে রং ধরার আগে
বিষাদের রংগুলো চাপা দিয়ে
পলাশের রং ধরে আমার উদাসী হৃদয়ের পরতে পরতে,
আমি আনমনে হেঁটে যাই কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় ছায়ায়
তোমার আমার অনেক নিবিড়তার মৌন সাক্ষী সেই বেঞ্চটা বুক পেতে দেয় আমাকে,
স্মৃতি পীড়িত আমি কষ্টের সাথে গলাগলি করে নিশ্চুপ বসে থাকি একা একেবারে একা ,
প্রেমমগ্ন জুটিতে জুটিতে পূর্ণ হয়ে উঠে চারিপাশ,
তারা বাহুতে বাহুতে জোড়ে নেয় আমূল পৃথিবী
চারিপাশে যা কিছু সুন্দর, ভীষণ মানানসই,
বেমানান শুধু আমি একজন ,
সেলফোনে টিপে যাই মুখস্থ নাম্বার ০১৭১*******
মেশিনকন্যা কেবলই শুনায় - তার গৎ বাঁধা পংক্তি মালা

 ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান

তোমার উপাখ্যান দেয়া আমার দ্বারা কি সম্ভব
নাফিয়া সুলতানা(নিলি)

তোমার উপাখ্যান দেয়া আমার দ্বারা কি সম্ভব?
না,
তোমার ব্যাপ্তি যে কতোখানি ?
সেটাও ব্যাখ্যা দেয়া অসম্ভব !
একটা ঝটকায় পাল্টে যেতে পারে সাগর পাহাড় ভূমি ,
কিন্তু পাল্টাতে পারবেনা আমার মনের বিশালতাকে
তোমার উপাখ্যান ভুলে যাওয়া কি সম্ভব ?
না,
এক বিন্দু সিন্ধু পরিমাণ যে গভীর খাঁদ তুমি তৈরি করেছো ,
সেখানে শতবার জল সেচলেও এতোটুকুও কমবেনা
মোহনার সাথে মিশে যেতে চেয়েও এখন তা আর পারা যায়না
তোমার উপাখ্যান দেয়া আমার পক্ষে কি সম্ভব ?
না.........
 ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান

আছে শুধু এক প্রতিচ্ছবি
মুস্তফা কামরুল আখতার

লাইটপোস্টের আলোয় আবছা দেখতে পাই মানুষটাকে
অস্পষ্ট, ঝাপসা অবয়ব কঠিন, নিষ্ঠুর চেহারা, মনে হয় অনায়াসে
ছিনিয়ে নেবে জীবন মানুষটা প্রায়ই আসে পেছন পেছন
কী চায় ? আমি নিরীহ মানুষ, পকেটে অল্প কিছু নোটগোঁজা
পুরনো ওয়ালেট, একটা মুঠোফোন ব্যস !

কিংবা, আমাকেই তস্কর ভেবে ফেউ লাগিয়েছে কেউ ?
আয়নায় নিজেকে দেখে অতটা দুর্ধর্ষ মনে হয়নি তো !
দ্যাখো, আমি নই কোন কেউকেটা কিংবা কেতাদুরস্ত
ব্যবসা-উদ্যোক্তা নই বড় আপিসের বড় কত্তা !
পুরনো তক্তপোষে ঝিমিয়ে আধপেটা খেয়ে জীর্ণ সময়ে
হাঁটি, হাঁটতে হাঁটতে একপাক দেখে নেই কিছু এঁদোগলি
ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া খাবারের সঙ্গে বেওয়ারিশ কুকুরের
আর পথশিশুর মৈত্রী আমি মানুষের ব্যাথায় তেমন কুঁকড়াই না,
তারপরও শীতার্ত মানুষ আর খিদেভরা কিছু ছবি জ্বালায়
তাইলে অমন নাছোড়বান্দার মত কেন লেগেছে ফেউ ?

তবে কি ভেবেছে আমার কাছে আছে কোন দুর্ধর্ষ কারো খোঁজ ?
কারো চেহারার সঙ্গে আছে আমার আশ্চর্যজনক কোন মিল ?
কিংবা আমি জড়িয়ে আছি ভয়ঙ্কর কোন শেকলে ?
ভেবেছে,আমার বুকের ভেতরে আছে কোন গুপ্তনকশা ?
চলে যায় মানুষটি দীর্ঘ পা ফেলে হয়ত আজকের মত

আমি অলস বিষণ্ণ দুপুরে পাশ ফিরে শুয়ে থাকি দীর্ঘশ্বাস ফেলে
যদি আমার মনের লুকোনো শেষ মুদ্রাটিও ছিনতাই হয় ?
বিশ্বেস নেই, যে ভীষণ যুগ ... ভিখেরীও স্বস্তিতে নেই যে !
ইচ্ছে হয় বলি, আমার কাছে কিছু নেই শুধু ওয়ালেটে
রাখা ছোট্ট একটি জীর্ণ ছবি, রঙচটা সম্বল শুধু ওটুকুই -
যদিও এর একটি খোদাই করা প্রতিচ্ছবি আছে বুকের ভেতরে
আমার ভালোবাসার অনিন্দ্যসুন্দর প্রতিচ্ছবি
 
 ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান

ষড়রিপুর মাঝে বন্দি
যাযাবর জীবন

মনের ঘরে কিসের আশা, মনের মাঝে কিসের বাসা
বন্ধ ঘরের কেওর মেলে, বন্ধ মনের গহীন কোনে
একটু খানি উঁকি, চমকে যেন উঠি
হিংস্র যেন দানব আমি, দাবার ঘরের ঘুঁটি

চলার পথের ষোল বাঁকে, খোঁজে নারী লোলুপ চোখে
চোখের মাঝে লালসা ঝরে, চোঁরা চোখে চেয়ে দেখে
মনে মনে বাহুডোরে একলা ঘরে বন্দি করে
পেতাম যদি একলা নারী একটি বারের সাথী
কাম যখন ওঠে জেগে, বিবেক তখন রয় ঘুমিয়ে
ঘরের মাঝেই বিবি আছে, অপেক্ষারই প্রহর চেয়ে
পেছন ফিরে তাকাই যদি চমকে যেন উঠি
কামের লিপ্সা দানব বানায় দাবার ঘরের ঘুঁটি

মনের ঘরে ক্রোধের বাসা কোথায় পালায় ভালোবাসা
শ্বশুর বাড়ির টাকা কড়ি মনের মাঝে ওরায় ঘুড়ি
বিবির সাথে মিঠে কথার মালার লহর বুনি
লোলুপ মনের গহীন কোনে কড়ির হিসাব গুনি
না মিটলে লোভের আশা বিদ্ধ যে হয় ভালোবাসা
বউ পেটালো হিংস্র পশু নির্যাতনে দানব শিশু
একটু খানি পেছন ফিরে চমকে যেন উঠি
ক্রোধের ঘরে হলাম দানব দাবার ঘরের ঘুঁটি

লোভ লালসা থাবা মেলা, টাকার পিছে ছুটে চলা
পাশের বাড়ির খেলার সাথি, হাঁকায় যে আজ বড় গাড়ি
পেছনে পড়ে আছি আমি ছিলেম যে তার সাথি
বিবেকটারে মোচর দিয়ে বোধ বুদ্ধি বিসর্জনে
ছুটে চলি টাকার পিছে পেতে গাড়ি বাড়ি
লোভের থাবা গ্রাস করেছে, বিবেক নিলো আড়ি
হঠাৎ করেই পেছন ফিরে চমকে যেন উঠি
লোভের মাঝে হিংস্র দানব দাবার ঘরের ঘুঁটি

কিসের মোহে অন্ধ হলাম বিবেকটারে বিদায় দিলাম
মদের নেশায় হয়ে চুরচুর শরীরটাতে হয় ভাংচুর
কিবা পেলাম কি হারালাম একটু যদি আগে ভাবতাম
মনের মাঝে হিংসা জাগে বন্ধু আমার চলে আগে
রিপুর কাছে বাঁধা আমি পরশ্রীকাতর এই মন
বোধ বুদ্ধি সকলই যেন দিয়েছিলেম বিসর্জন
মোহ হতে মুখ ঘুরিয়ে চমকে যেন উঠি
মনের মাঝেই দানব আমি দাবার ঘরের ঘুঁটি

তাইতো এখন শেষের বেলায় জীবন যে পার করেছি হেলায়
অতীতগুলো বড়ই ভাবায় করেছি পার লোভ লালসায়
পুরো জীবন ভাবতে গিয়ে পেছন ফিরে উঁকি দিয়ে চমকে যেন উঠি
ষড়রিপুর মাঝে বাঁধা, আমি যেন এক দাবার ঘরের ঘুঁটি

 ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান

কোথায় আছ কেমন আছে

আব্দুল্লাহ জামিল

আমি জেনে গেছি আমার ভালোবাসাটি
কোথায় আছে কেমন আছে সে।

দেশ থেকে দেশ ঘুরে ঘুরে আসে
সমুদ্র থেকে সমুদ্রে, শূণ্য থেকে মহাশূণ্যে যায়।
উত্তর-দক্ষিণ মেরু হয়ে ঠান্ডা শান্ত
এখন হাওয়াইতে এসে হয়েছে উত্তাল ঢেউ।

আমি জেনে গেছি আমার ভালোবাসাটি
কোথায় আছে কেমন আছে সে।

নদীর এপারে শুধু উঠেছে কি ঝড়?
ওপারে কি একটুও বয়নি বাতাস?
এপারে কি ধরেছে শুধু ভাঙ্গন ?
ওপারে জাগেনি কি একটুও চর?

আমি জেনে গেছি কোথায় আছে কেমন আছে।
তুমি কি কিছুই জানতে পারোনি গৌরী?

  ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান

সাহিত্য বন্দনা

মোঃ আলী হাছান শামীম

সাহিত্য সমাজের দর্পণ স্বরূপ
সাহিত্য জীবন্ত ছবি,
ইতিহাস ঐতিহ্য সভ্যতা সংস্কৃতি
সাহিত্যে ফোটে সবই

সাহিত্য জীবনের সমালোচনা গ্রন্থ
শিল্পীর রং তুলি,
সাহিত্য মনের ভাবণার প্রকাশ
সাহিত্যিকের অমূল্য বুলি

সাহিত্য সভ্যতার উৎকৃষ্ট ব্যারোমিটার
সাহিত্য সেতু বন্ধন,
সাহিত্য যোগায় স্থান কাল পাত্রে
প্রেমপ্রীতির স্পন্দন

সাহিত্য সুগন্ধি পুষ্প সম
সুবাস ছড়ায় ফোটে,
সাহিত্য সোপানে লুকানো সুঘ্রাণে
ভক্ত মধু লুটে

সাহিত্য জাতির কায়ার ছায়া
সুখ দুঃখের দলিল,
সাহিত্য চর্চায় মিলে প্রশান্তি
আত্মা হয় অমলিন

সাহিত্য যুদ্ধের শানিত হাতিয়ার
কলম সৈনিকের দূর্গ ,
সাহিত্য পারে গড়তে সমাজ
শান্তিময় সুন্দর অপূর্ব

সাহিত্য জাতির অমূল্য সম্পদ
সাহিত্য ভাষার মান,
সাহিত্যঙ্গনে তাই বন্ধনা গাই
যত সাহিত্য সাহিত্যিক মহান।।

  ছবি - মোঃ সরোয়ার জাহান

1 টি মন্তব্য:

  1. প্রত্যেক্টা কোবিতা সুন্দর পরিচ্ছন্ন বক্ত্যব্যে ভরা । খুব ভাল লাগলো ।

    উত্তরমুছুন